Legal validity of the Contracts between Adani and Bangladesh Government (06.10.2024)

Legal validity of the Contracts between Adani and Bangladesh Government (06.10.2024)

An article assessing the legal validity of the Adani Contracts with the Government of Bangladesh was published in the Lawyersclub Bangladesh on 06.10.2024

Find the link below to the article – https://lawyersclubbangladesh.com/2024/10/06/%e0%a6%86%e0%a6%a6%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%a5%e0%a7%87-%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%a4/

Read the article below –

আদানির সাথে করা বিতর্কিত বিদ্যুৎ চুক্তির আইনগত বৈধতা কতটুকু?

২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ভারতীয় কোম্পানী আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) একটি চুক্তি সই করেছিল। অস্বাভাবিক গোপনীয়তা অনুসরণ করে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির খসড়া বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগে এলেও অজানা কারণে তা পাঠানো হয়নি পিডিবিতে। ফলে পিডিবির কর্মকর্তারা চুক্তির শর্তাবলীর বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না।

তবে সাম্প্রতিক ডলার সংকটে আদানির বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ, ফলেপাওনা আদায়ের জন্য আগস্ট মাসে পিডিবিকে চিঠি দিয়েছে আদানি। পরিবর্তিত বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় তাই নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে আদানির চুক্তিটি। যাচাই করে দেখা যায়, অস্বাভাবিকভাবে নিজের স্বার্থবিরোধী একতরফা এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আছে পিডিবি, যেখানে এমন সব কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া আছে, যার ফলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়াটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই বিষয়ে সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল শেয়ারবিজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, সেখানে জানা যায় যে,আদানির সঙ্গে চুক্তিটি বাতিল করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে যে, চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে কোনো এক্সিট ক্লজ (বাতিল করার সুযোগ) রাখা হয়নি। যদি আদানি টানা ৯০ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখে তবেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলের আবেদন করা সম্ভব। তা না হলে বিনা কারণে চুক্তি বাতিল করলে ২৫ বছর ধরে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে। এর বাইরে বিদ্যুৎ না কিনেও ২৫ বছর ধরে উৎপাদন সক্ষমতার ৩৪ শতাংশ বিল পরিশোধ করতে হবে। আর হুট করে কারণ ছাড়া চুক্তি বাতিল করতে গেলে আদানি আইনী প্রক্রিয়ায় তা মোকাবেলা করবে, কিন্তু সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হেরে যাবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।

পুরো চুক্তিটি খুব ভালোভাবে না যাচাই করে একেবারে সুনির্দিষ্ট আইনগত বিষয়গুলো নির্ধারণ করা মুশকিল। এই ধরণের চুক্তি প্রকাশ্যে না আসলেও ২০২২ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এবং ২০২৩ সালে “আদানিওয়াচ” নামক একটি অনুসন্ধানী সংবাদ সংস্থা আদানির সাথে পিডিবির চুক্তির কপি সংগ্রহ করে এর বিশ্লেষণ করেদু’টো রিপোর্ট প্রকাশ করে, যা চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে পাবলিক ডোমেইনে আমাদের কিছু ধারণা দেয়। তাদের ভাষ্যগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, খুবই একপেশে চুক্তি হলেও আইনী বৈধতার প্রশ্নে চুক্তিটি চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে দুইটি গ্রাউন্ডে।

প্রথমত, ভারতের আইন অনুযায়ী নিজের দেশের চাহিদা মিটিয়ে সারপ্লাস থাকলেই কেবলমাত্র বিদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানী করা যেতে পারে। বলা হচ্ছে, সেই সময়ে ভারত বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না, এবং আদানি যাতে বিদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারে, সে জন্য ঝাড়খন্ড রাজ্যের নিজস্ব বিদ্যুত বিষয়ক নীতিমালাও পরিবর্তন করা হয় ২০১৬ সালে। বলা বাহূল্য, ২০১৬ সালে ঝাড়খন্ড রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল বিজেপি।

ভারতের প্রেক্ষিত থেকেই চুক্তিটি যে আইনসিদ্ধ নয় তা প্রমাণ করার জন্য এই বিষয়টি ব্যবহৃত হতে পারে। আদানিকে কেন অবৈধ সুবিধা দেয়া হচ্ছে এটা নিয়ে গত বছর পার্লামেন্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাহুল গান্ধীও।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, চুক্তিতে এমন কিছু খাতে বাংলাদেশকে টাকা পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে, যে খাতগুলো বাস্তবে নেই। যেমন, চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ একটা রেফারেন্স ট্যারিফ পরিশোধ করবে, যার মধ্যে থাকবে আমদানিকৃত পণ্যের কাস্টমস ডিউটি, সার্ভিস ট্যাক্স, কৃষি কল্যাণ ট্যাক্স, কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর, যন্ত্রপাতির উপর ভ্যাট, পূর্ত নির্মান কাজের উপর ট্যাক্স এবং আয়কর, ইত্যাদি। তবে ২০১৭ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষর হবার মাসকয়েক আগেই ভারত সরকার Goods & Service Tax (GST) নামে একটি সমন্বিত কর ব্যবস্থা চালু করে, যা রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে থাকা বেশিরভাগ কর প্রতিস্থাপন করে।

তদুপরি, চুক্তি স্বাক্ষরের ১৫ মাস পরে, ২০১৯ সালে আদানির এই প্রকল্পটিকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) ঘোষণা করা হয়, যা কোম্পানির আরও বিভিন্ন কর মওকুফ করে দেয়। বলা হচ্ছে যে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) ঘোষণা হবার পরই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেশিরভাগ আমদানি হয়েছে, এবং সেসব আমদানিকৃত কয়লার উপর আমদানি শুল্ক বা কোনো অন্যান্য কর পরিশোধ করার প্রয়োজন হয়নি। তবে কর পরিশোধে এই বিপুল পরিমাণ ছাড় পেলেও বাংলাদেশের কাছে বিক্রিত বিদ্যুতের দামে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

চুক্তি স্বাক্ষরের পরে যদি চুক্তির উপরে প্রযোজ্য ভারতীয় আইনের কোনো মৌলিক পরিবর্তন ঘটে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিদ্যুতের ক্রেতা বাংলাদেশকে তা যথাযথ নোটিশের মাধ্যমে জানাতে হবে, এই বিধান চুক্তিতে আছে। চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পরে এইসব আইনগত পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে আদানিওয়াচ জানতে চাইলে পিডিবি থেকে কোনো জবাব দেয়া হয়নি। এই ধরণের নোটিশ না দেয়া হয়ে থাকলে চুক্তির শর্তভঙ্গের জন্য আদানিকে দায়ী করে চুক্তি শেষ করার, বা অন্ততপক্ষে সংশোধনের জন্য আদানিকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনার গ্রাউন্ড হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা যেতে পারে।

চুক্তির শর্তাবলীর এইসব টেকনিক্যাল খুঁটিনাটির বাহিরেও, প্রাইভেট ইন্টারন্যাশনাল ল বা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আইনের অধীনে, কোনো চুক্তি যদি সাধারণভাবে পাবলিক পলিসির বিরুদ্ধে যায়, কিংবা চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় যদি সরাসরি প্রতারণা বা দূর্নীতির অভিযোগ বা প্রমাণ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রেও আইনগতভাবে চুক্তি বাতিল করা যেতে পারে।

এইখানে প্রাসঙ্গিক দু’টো দেশের ঘটনা বলেই শেষ করি। কেনিয়ার বৃহত্তম বিমানবন্দর জোমো কেনিয়াত্তা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেয়ার একটা আলোচনায় বসেছিলেন সে দেশের সরকার, গোপন চুক্তিও হয়ে গেছে এই মর্মেও খবর রটে যায়। এই গেল জুলাই-অগাস্টেই নাইরোবিতে তীব্র আন্দোলনের মুখে সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। আইনজীবীরা আদালতে গেলে এই চুক্তির নেগোসিয়েশন ও পরবর্তী কার্যক্রমের উপরে স্থগিতাদেশ দেন কেনিয়ার হাইকোর্ট। গত মাসের শেষ দিকে আদানির পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয় যে, চুক্তিটা এখনও ডিউ-ডিলিজেন্স অর্থাৎ যাচাইবাছাই পর্যায়ে আছে।

আর এইদিকে শ্রীলংকার জেভিপি নামক একটি রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দেয়, তাদের যদি নির্বাচিত করা হয় তাহলে তারা আদানির সাথে করা ৪৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করে দিবে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেভিপির প্রধান অনুরা কুমার দিশনায়েকে শ্রীলংকার নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন। আদানিকে কিভাবে ডিল করবেন তারা এখন, দেখার বিষয়।

যা হোক, এই মাপের একটা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল কিংবা সংশোধনের চেষ্টা করা যে কোনো পক্ষের জন্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আরবিট্রেশন বা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিষয়ক আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে/বিপক্ষে এ যাবতকালের যে ১০-১১টা মামলা হয়েছে, তাতে দেশ হিসেবে আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেও প্রীতিকর নয়। ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন যে দায়দেনার দাবী তুলে আদানি বাংলাদেশ সরকারের উপরে চাপ দিচ্ছে মর্মে যে খবরগুলো আসছে, সেটা উদ্বেগজনক নিঃসন্দেহে। আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ হুট করে বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে কোনো জটিলতা তৈরি হয় কি না সেগুলোও বিবেচ্য বিষয়।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্পিরিট ধারণ করে দূরদৃষ্টি, দেশপ্রেম এবং বাস্তবসম্মত সাহসের সাথে এই বিষয়গুলো ডিল করা জরুরি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং পেশাদারিত্বের সাথে এর সুরাহা করবে, এই প্রত্যাশা সকলের।

লেখক: শাইখ মাহদী; ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।

Share this content: